"অষ্টগ্রাম উপজেলা"
অষ্টগ্রাম উপজেলা,কিশোরগঞ্জ।
অবস্থান:
অষ্টগ্রাম উপজেলা একটি হাওড় বেষ্টিত যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন উপজেলা।কিশোরগঞ্জ জেলার অন্তর্গত একটি
উপজেলা ।ভৌগোলিক অবস্থান : ২৪.২৬৬৬৬৬৬৭° উত্তর দ্রাঘিমাংশ ৯১.১২৫° পূর্ব-দ্রাঘিমাংশ।
বাংলাদেশের কিশোরগঞ্জ জেলার একটি উপজেলা। এই উপজেলার উত্তরে কিশোরগঞ্জ জেলার মিঠামইন ও ইটনা উপজেলা, দক্ষিণে ব্রাহ্মণবাড়ীয়া জেলার নাছির নগর, পূর্বে ব্রাহ্মণবাড়ীয়া জেলার নাছিরনগর উপজেলা ও হবিগঞ্জ জেলার লাখাই উপজেলা, পশ্চিমে কিশোরগঞ্জ জেলার বাজিতপুর ও নিকলি উপজেলা। আয়তন ৩৫৫.৫৩ বর্গকিলোমিটার।
প্রশাসনঃ
এই উপজেলার ইউনিয়নগুলো হচ্ছে - ১.আদমপুর ইউনিয়ন পরিষদ, ২.অষ্টগ্রাম সদর ইউনিয়ন পরিষদ, ৩.বাংগালপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ, ৪.দেওঘর ইউনিয়ন পরিষদ, ৫.কলমা ইউনিয়ন পরিষদ, ৬.কাস্তুল ইউনিয়ন পরিষদ, ৭.খয়েরপুর আব্দুল্লাহপুর ইউনিয়ন পরিষদ, ৮.পূর্ব অষ্টগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদ,, ৫৯টি মৌজা, ১৭৩টি গ্রাম আছে ।
নাম করণঃ
এই উপজেলার নাম অষ্টগ্রাম কেন, এ নিয়ে নানা রকমের মতামত আছে। অধিকাংশের মতে — খ্রিষ্টীয় দ্বাদশ শতকে বঙ্গের রাজা বল্লাল সেনের কৌলিন্য প্রথার বিরুদ্ধে একটি বিদ্রোহ দানা বেঁধে উঠে। এই সময় বল্লাল সেনের অধীনস্থ সামান্ত অনন্ত দত্ত অষ্টগ্রামের কাস্তুল নামক স্থানে বসতি একটি স্থাপন করেন। অনন্ত দত্তের সাথে তাঁর গুরু শ্রী কণ্ঠদ্বিজ এবং অনচরবর্গ এই এলাকায় আসেন। তারা এই এলাকায় মোট আটটি গ্রামে বসতি স্থাপন করে। কালক্রমে এই আটগ্রাম অষ্টগ্রাম নাম পরিচিতি লাভ করে।
অন্যমতে এক সময় এই স্থানটিতে একটি সমৃদ্ধশালী গ্রাম ছিল। সে সময়ে এই গ্রামের নাম কি ছিল তা জানা যায় না। হযরত শাহজালাল (রঃ) এর আটজন সঙ্গী নিয়ে এই অঞ্চলে ধর্ম প্রচারের জন্য এসে কিছুদিন বসবাস করেছিলেন। অষ্ট (আট) আউলিয়া গ্রাম হিসাবে আট আউলিয়ার গাঁও বলা হতো। কালক্রমে তা অষ্টগ্রামে পরিণত হয়েছে।
অন্যমতে এই অঞ্চলের আটটি মৌজা গ্রাম হিসাবে সুপ্রতিষ্ঠিত ছিল। এই মৌজাগুলো হলো — অষ্টগ্রাম, আসিয়া, দুবাই ভাটেরা, নরসিংহ পূর্ববাদ, খাসাল, বীরগাঁও, বত্রিশ গাঁও ও বারেচর। এর ভিতরে অষ্টগ্রাম ছিল সবচেয়ে সমৃদ্ধশালী। পরে এই গ্রামগুলোর সমন্বিত নাম দাঁড়ায় অষ্টগ্রাম।
১৮৬০ খ্রিষ্টাব্দে অষ্টগ্রাম ময়মনসিংহের মহকুমা প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৮৩ খ্রিষ্টাব্দে এই থানকে জেলায় পরিণত করা হয়।
শিক্ষাঃ
কলেজ ১টি,উচ্চ বিদ্যালয় ৪টি, জুনিয়র উচ্চ বিদ্যালয় ১টি, মাদ্রাসা ১২টি,সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ৪৫টি,বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ৫টি।
জনসংখ্যাঃ
পুরুষ ৫১.৪১%, মহিলা ৪৮.৫৯%; মুসলিম ৮২.৮৪%, হিন্দু১৫.৬৪%; পৌত্তলিক ও অন্যান্য ১.৫২%।
প্রধান পেশাসমূহঃ
কৃষি ৪৮.৫৫%,মাছ ধরা ৩.৪৩%,কৃষি মজদুরি ২৯.৩৬%,দিনমজুর ২.৪৭%, ব্যবসায় ৫.৫৩%, চাকুরী ১.৭৫%, অন্যান্য৮.৯১%।
সাংস্কৃতিক সংগঠনঃ
সাংস্কৃতিক কর্মকর্তা ক্লাব ১টি,পাবলিক লাইব্রেরী ১টি, খেলার মাঠ ৩০টি।
জমির ব্যবহারঃ
মোট চাষ উপযোগী জমির পরিমান ২২৮৯৯.০৭ হেক্টর, পতিত জমি ৩০৩।৫২ হেক্টর, এক-ফসলী ৭৯.২৪%,দ্বি-ফসলী ১৯.৫০%, ত্রিফসলী ১.২৬%।
কৃষকের মাঝে জমির নিয়ন্ত্রন ৩৬% ভূমিহীন, ২০%ছোট, ৩০%মাঝারী, ১৪% ধনী চাষী।
ফসলঃ
প্রধান শস্য ধান, সরিষা, আলু, মটরঁশুটি, তিল।
বিলুপ্ত বা প্রায় বিলুপ্ত শস্য পাট।
প্রধান ফল আম, কাঁঠাল, কলা, পেঁপে কাল জাম।
মাছ চাষ, পশুপালন, পোল্ট্রিঃ
মাছের খামার ২৫টি, পোল্ট্রি ৪টি, হ্যাচারী ১০টি।
যোগাযোগ ব্যবস্থাঃ
পাঁকা রাস্তা ১০কিঃমি, মাটির রাস্তা ২৭৮কিঃমি।
রাষ্ট্রপতির নির্বাচনী এলাকা হওয়ায় এখানে তিনি বিশেষ নজর রাখেন। যোগাযোগবিচ্ছিন এ দ্বীপে তিনি দারুণ সব রাস্তা ঘাট আর ব্রিজ করেছেন। চেনাই যায় না গত দুই বছর (২০১১)আগের অষ্টগ্রামকে। বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত পুরো লোকালয়।
ঐতিহ্যবাহী যানবাহন পাল্কি, মহিষের গাড়ি, ঘোড়ার গাড়ি, গরুর গাড়ি। এই যানবাহনগুলো বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায়।
বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ইউনিয়ন পল্লিলবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ১২.৫৬% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।
খাবার পানি:
পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৯৩.১৭%, পুকুর ১.৭৭%, ট্যাপ ০.৬৭% এবং অন্যান্য ৪.৩৯%।
হাট, বাজার, মেলাঃ
মোট হাট বাজার ৯টি, তার মধ্যে বিশেষ উল্লেখযোগ্য হচ্ছে অষ্টগ্রাম, আদমপুর, শরিফনগর, মেলা ২, বাংগালপাড়া ও আব্দুল্লাহপুর।
প্রধান রপ্তানীজাত পণ্য ধান, আলু, পেঁপে, কলা, চীনাবাদাম।
প্রধান নদী সমূহঃ
এই জেলার প্রধান নদী ৩টি। এগুলো হলো মেঘনা, বরাক ও ঘোড়ায়ুত্রা। উপজেলার প্রধান বিলগুলো হলো- বন্দ্রা, ধোপা, টুপা, মদন ও পদ্মা।
স্বাস্থ্য কেন্দ্রসমূহ:
উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্র ১টি,পল্লী স্বাস্থ্য কেন্দ্র ১টি, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র ১টি।
উল্লেখ্যযোগ্য স্থান বা স্থাপনাঃ
১. ঐতিহাসিক কুতুব শাহ্ মসজিদ।
২. কাস্তুল পাথরের মসজিদ
৩. কাস্তুল (ঈশা খাঁ ও মানসিংহের যুদ্ধস্থল)
৪. হাবিলী বাড়ি (মাজার)
ধারণা করা হয়, ১৬ শতকের শেষদিকে বা ১৭ শতকের প্রথম দিকে একজন বুজুর্গ কুতুব শাহ মসজিদটি তৈরি করেন। পাঁচ গম্বুজবিশিষ্ট মসজিদটির কারুকাজ অসাধারণ। এত বছর পরেও মসজিদটি মোটামুটি ভালো অবস্থাতেই আছে। আপনি সেখানে আসরের নামাজ পড়তে পারেন। আর যদি সেদিন থাকে ওরস, তাহলে হাজার হাজার মানুষের সমাগম হবে কুতুব শাহ (রহ.) মাজারে। মাজারের পাশেই মেলা বসে। দোকান আর মানুষে হাঁটাচলাই মুশকিল হয়ে পড়তে পারে।
কৃতী ব্যক্তিত্বঃ
১. মুক্তিযোদ্ধা কালিন অষ্টগ্রাম থানার সংগ্রাম কমিটির সভাপতি ও নির্যাতিত জননেতা কাজী আব্দুলবারী ।
(১৯৩৩ সালের ২১ শে ডিসেম্বর-১৯৮৩ সালের ২১ ডিসেম্বরইন্তেকাল করেন)
২.অষ্টগ্রাম পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়েরপ্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান শিক ,ময়মনসিংহ জেলাবারের অন্যতম আইনজীবী মরহুম কাজীআব্দুল আওয়াল।
৩.। অষ্টগ্রামের খ্যাতনামা ব্যক্তি অনাথ গোপাল সেন বিট্রিশ ভারতেকংগ্রেসের সভাপতি ছিলেন।
৪.ব্যারিস্টার নীহারেন্দু দত্ত মজুমদার পশ্চিমবঙ্গেরমন্ত্রী ছিলেন।
৫.নরেন্দু দত্ত মজুমদার অসাধারণ মেধাবী আইসিএসঅফিসার ছিলেন। ব্যারিস্টার নীহারেন্দু দত্ত মজুমদারের ভাই উনি।
৬.খান বাহাদুরমোয়াজ্জেম হোসাইন অষ্টগ্রামের আরেক কৃতি সন্তান।
৭.সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিনহোসেন পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় যোগাযোগ মন্ত্রী ছিলেন। তিনি পাকিস্তানআন্দোলনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তিনি মুসলিম লীগের একজন সক্রিয় কর্মী।
৮.বীর মুক্তিযোদ্ধা মো: গিয়াস উদ্দিন আশরাফী। যুদ্ধ কালীন কমান্ডার ও সাবেক চেয়ারম্যান ১নং দেওঘর ইউনিয়ন পরিষদ।
আরও অনেকে কৃতি ব্যাক্তি আছেন।
যেভাবে যাবেন :
সবচেয়ে ভালো হলো ট্রেনে যাওয়া। প্রতিদিন সকাল ৭টায় এগারসিন্দুর প্রভাতি (বুধবার বন্ধ) ছাড়ে কিশোরগঞ্জের উদ্দেশে। এতে উঠে কুলিয়ারচর নেমে পড়ুন। ভাড়া ১২০ টাকা। এ ছাড়া গুলিস্তান ফুলবাড়িয়া থেকে বিআরটিসি বাসে করেও কুলিয়ারচর যাওয়া যায়। ভাড়া ২০০ টাকা। যাঁরা ভৈরব হয়ে যেতে চান, তাঁরা ভৈরব নেমে সিএনজিতে করে কুলিয়ারচর যাবেন। শেয়ারে ভাড়া নেবে জনপ্রতি ৪০ টাকা।
কুলিয়ারচর নেমে একটা রিকশা নিয়ে চলে যান লঞ্চঘাট। এখান থেকে প্রতিদিন সকাল ৬টা, ৮টা, ৯টা, ১১টা এমনি করে ৩টা পর্যন্ত লঞ্চ ছেড়ে যায় অষ্টগ্রাম। ভাড়া ১০০ টাকা। সময় লাগবে সাড়ে তিন ঘণ্টা।
কোথায় থাকবেন :
থাকার বেশ কটি অপশন আছে। নিজেরা টেন্ট নিয়ে ক্যাম্পিং করতে পারেন। আছে জেলা পরিষদ ডাকবাংলো। কেয়ারটেকার এর নম্বর দিলাম ০১৯১৪-৯৭৫৩৮৯। আগে কথা বলে বুকিং দিতে পারেন। ভাড়া ৩০০-১৫০০ টাকা (রুম ভেদে)। এ ছাড়া বাজারে দুটি সাধারণ মানের হোটেল আছে, ভাড়া ১০০-২০০ টাকা।
উক্ত তথ্য সম্পর্কে আপনার মাতামত, সংশোধন, পরিবর্ধন বা পরিবর্তনের প্রয়োজন হলে আমাদের কমেন্ট করে জানান।লেখতে গিয়ে ভূল তাকতে পারে।তাই ভূল গুলো জানালে ভাল হয়।
Faysal Ahmed Prodip(Himu).
অনেক ভাল লেগেছে এই লিখা গুলো পড়ে। অনেক কিছুই জানার আছে অনেক কিছুই অজানার ছিল।
ReplyDeletetnk u.....
Delete