#হটাৎ_বৃষ্টি
#হটাৎ_বৃষ্টি
ঠিকমত আর ঘুমটা ঘুমাতে দিলো না নিলয় আর নদী। ওদের ফোনের অত্যাচারে আমার আরামের ঘুমটা হারাম হয়ে গেল। আর এতো ফোন দেওয়ার কারন হলো ওরা ভার্সিটিতে বসে আছে আর আমি ঘুমের দেশে আছি। ওরা আমার জন্য ক্লাসেও যেতে পারছে না। আর যাই হোক, আমাদের ৩ জনের মাঝে একটা মিল আছে যে আমরা এক সাথে ক্লাস করি। যদি তিন জনের মাঝে এক জন ক্লাসে না আসি তাহলে অন্যরাও ক্লাস করবে না। এতে যত গুরুত্ব পূর্ণ ক্লাস মিস হয়ে যাক না কেন? আমি ওদের অত্যাচারের কাছে হার মেনে ফ্রেশ হয়ে কাধেঁ ব্যাগ নিয়ে ভার্সিটিতে গেলাম। ভার্সিটিতে ঢুকতেই দেখি দুইজন চোখ বড় বড় করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। ওদের সামনে যেতেই আমাকে কথা বলার সুযোগ না দিয়ে মার শুরু করলো নিলয় আর নদী মিলে......
-- আরে আর কত মারবি? এরপর তো সদর হাসপাতালে ধরবে না।
-- মাঝে মাঝে মনে হয় তোর এমন অবস্থা করি যেন...
-- যেন বাকি সবার সামনে তোরা দুইটা হিরো হতে পারিস।
-- কি করে?
-- দেখ আমায় মারবি আর পাবলিক দেখবে। আর সবাই ভাববে তোদের হাতে জোর আছে।
আর কোন কথার উত্তর না দিয়ে উল্টা মারতে শুরু করলো আমার মত অবুঝ বালকটাকে। তারপর আমি আবার বললাম.....
-- হইছে এবার ক্লাসে তো চল। কিন্তু এখন কি ক্লাসরে?
-- হাইড্রোলিক্স।
-- কী? আমি শেষ?
-- কেন?
-- স্যার বলছিল এসাইনমেন্ট আজ জমা না দিলে ক্লাসের বাইরে কান ধরিয়ে দাড় করিয়ে রাখবে।
-- তাহলে এখন কি ক্লাস ফাকিঁ দেওয়ার প্লেন আছে?
-- কেন যে আমার পেটের কথা তোরা বুঝে যাস তাই তো তোদের দুইটারে আনার এত্তো ভালো লাগে। এক কাজ কর তোরা দুইজনে ক্লাসে যা আর আমি এখানের গাছের তলায় বসে স্যারের এসাইনমেন্ট গুলো লেখে নেই।
-- আচ্ছা তবে লাইব্রেরিতে বসেও তো লেখতে পারস।
-- তা পারি কিন্তু তোরা তো জানস যে আমি মেয়েদের আশে পাশে থাকি না।তাছাড়া লাইব্রেরিতে মেয়েদের পরিমান একটু বেশিই।
-- ও তুই মেয়েদের আশে পাশে থাকস না তাহলে আমার পাশে থাকস কেন?
-- তোর সাথে কি অন্য কোন মেয়ের তুলনা হয়। তোর মত মেয়ে লাখে একটা হয়। পুরু ছেলেদের টাইপের।
--বাব্বা রাজ তোর মুখে এতো প্রশংসা শুনতে কেমন যেন লাগে।
-- আচ্ছা এবার ক্লাসে যা আর আমি গাছের নিচে আছি।
ওরা চলে যেতে লাগলো আর আমিও গাছের নিচে গিয়ে বসলাম। মাত্র ব্যাগ খাতাটা বের করলাম আর তখনই আমার ফোনটা বেজেঁ উঠলো। ফোনটা হাতে নিতেই দেখি নদী ফোন দিয়েছে। আবার কি হলো........
-- কিরে তুই ক্লাসে যাস নি?
-- না তবে ক্লাসের সামনেই আছি তবে তুই শেষ আমায় কি বললি আমি ছেলেদের টাইপের? এর মানে কি?
-- না কিছু না তো।
-- ক্লাসটা শেষ হোক, আজ তোর হচ্ছে।
বলেই পাগলীটা ফোনটা রেখে দিলো। নিলয় আর নদীর সাথে আমি যা ইচ্ছা তাই বলতে পারি। হয়ত খুব ভাগ্য বলেই এমন দুইটা বন্ধু আমার নসিবে আছে।
এভাবে প্রায় ১ ঘন্টা হয়ে এসেছে আর আমারও এসাইনমেন্ট লেখা চলছে। গাছের নিচটাকে আপাতত আমি আমার ঘর বানিয়ে ফেলেছি। আমি বা কি করবো বাড়ি গেলে পড়ার কথা আমি ভুলে যাই তাই এখানেই বসে লেখা শুরু করলাম। হঠাৎ বৃষ্টি পরতে শুরু করলো তবে অনেকখন আগেই বৃষ্টি শুরু হয়েছে যা খাতা লেখার নেশায় আর খেয়াল হয় নি। এখন তো আমার মাথার উপরও বৃষ্টি পরছে তাই খেয়াল হলো যে বৃষ্টি পরছে। কোন মতে বৃষ্টির হাত থেকে খাতা আর বই গুলো বাচানোর বৃথা চেষ্টা শুরু করলাম। হঠাৎ করে খেয়াল করলাম আমার মাথায় বৃষ্টি পরছে না তবে বাইরে ঠিকই বৃষ্টি পরছে। তাই পাশে তাকাতেই দেখি এক মেয়ে আমার উপর ছাতা ধরে আছে। আর আমি ওর দিকে তাকিয়ে রইলাম।
-- কি হলো মুখের দিকে কি দেখছেন? আপনার খাতা খাতা বই ভিজে যাচ্ছে তো, গুছিয়ে নিন।
মেয়েটার ডাকে বাস্তবে ফিরলাম আর যথারীতি সব কিছু গুছিয়ে দাড়ালাম। তারপর আমার ওরে দেখতেই লাগলাম। কারন ছোট বেলায় এমন করে আমায় একজন বলে ছিল।
-- কি হলো এমন করে তাকিয়ে আছেন কেন? ভিজে যাচ্ছেন বলেই ছাতাটা ধরলাম। নয়ত বা ইচ্ছা ছিল না। আর সব থেকে বড় হলো আপনার বই খাতা গুলো ভিজে যাচ্ছিল।
-- আচ্ছা সকালে তো বৃষ্টি ছিল না তাই আমি ছাতা আনি নি। কিন্তু আপনি কি জানতেন যে আজ বৃষ্টি হবে?
-- না তো তবে মেয়েদের ব্যাগে সচরাচর একটা ছাতা তাকে বুঝলেন।
-- ও আচ্ছা আপনার নামটা জানতে পারি?
-- আমি লাবন্য আর আপনার নামটা?
-- লাবন্য
-- কি আপনার নামও লাবন্য??
-- আরে না আমি রাজ। আচ্ছা আপনার বাড়ি কোথায়?
-- এই তো ভার্সিটির কাছেই।
-- ও আচ্ছা আপনি কখনো বগুড়া গিয়ে ছিলেন।
-- না তবে আমি ছোট থাকতে ওখানেই থাকতাম। তবে বাবার বদলির কারনে চলে আসি। কিন্তু আপনি এইসব জানতে চাইছেন কেন?
-- না কিছু না। আচ্ছা তুমি কোন ডিপার্টমেন্টে পরো?
-- কম্পিউটারে ২য় বর্ষের ছাত্রী আর আপনি?
-- আমি সিভিলে ফাইনাল দিবো।
তারপর দুইজনেই নিরব হয়ে রইলাম। তারপর নিরবতা কাটিয়ে ও বলল.....
-- আচ্ছা বৃষ্টি কমে এসেছে। তাহলে আমি আসি।
-- আচ্ছা।
ও চলে যাচ্ছে আর আমি ওর চলে যাওয়া দেখছি। কেন জানি মনে হচ্ছে ও পিছনে ফিরে তাকাবে। একটু দূরে গিয়েই ও দাড়িয়ে গেল আর পিছনে তাকিয়ে একরা হাসি দিলো। আর আমার হাসি দিতে হলো না কারন ও তাকানোর সাথে সাথে আমার ঠোটেঁ হাসি ফুটলো। ও চলে গেল আর আমিও ওর চলে যাওয়া দেখছি। হঠাৎ নদী আর নিলয়ের আগমন ......
-- কিরে মেয়েটা কে?
-- অতীত, বর্তমান আর তোদের সাহায্যে ভবিষ্যৎ।
-- মানে?
-- ও আমার অতীত ছিল যাকে আজ বর্তমানে পেলাম আর তোরা একটু হেল্প করলেই ওরে আমার ভবিষ্যৎ করে নিতে পারবো।
-- ওই একটু ঝেড়ে কাশ তো...
আমি তখন ক্লাস ফাইভে পরি। আর আমাদের বাড়িটা ছিল দুতলা যেখানে উপর তলা ভাড়া দেয়া হয়।একদিন সকালের দিকে আমি রুমে বসে আছি। সেইদিন স্কুল বন্ধ থাকায় কি খেলবো ভাবছিলাম। হঠাৎ মা আসলো.....
-- রাজ বাবা পরতে বসো। এখনো ঘুম থেকে উঠার পরে আর পরতে বসো নি।
--পরে বসি মা
-- এখনই বসো।
-- আচ্ছা তবে বাড়ির বাগানে বসে পরো।
--আচ্ছা তবে দুষ্টামী করবে না।
আমি বই খাতা নিয়ে বাগানে আসলাম। বাগানে একটা টেবিলে বসলাম। বসে বসে অংক করছিলাম হঠাৎ বৃষ্টি শুরু হয়ে গেল। তার সাথে আমার বই খাতা গুলো ভিজতে শুরু করলো। আমি তারাতারি বই গুছাতে ব্যর্থ হয়ে নিজের শরীর দিয়ে বই গুলো আগলে ধরি। হঠাৎ খেয়াল করি আমার উপর বৃষ্টি পরছে না। তখন তাকিয়ে দেখি একটা ছোট মেয়ে আমার উপর ছাতা ধরে আছে। আর আমিও ওর দিকে তাকিয়ে রইলাম।
-- কি হলো এমন করে তাকিয়ে না থেকে বই গুলো গুছাও। নয়ত ভিজে যাচ্ছে তো ।
-- তুমি কে?
আমি লাবন্য এই বাসায় নতুন ভাড়া এসেছি। তুমি তো নিচতলায় থাকো তাই না?
-- হুমম কিন্তু তুমি জানো কি করে?
-- আরে আমি আর মা তোমাদের ঘরে গিয়ে ছিলাম কিন্তু তুমি ঘুমিয়ে ছিলে।
-- ও আচ্ছা। আমার বন্ধু হবে তাহলে চকলেট দিবো।
-- আচ্ছা বন্ধু।
এরপর থেকে ভালই চলছিল বন্ধুত্ব। এক সাথে খেলি আর স্কুলে যেতাম। কতশত মজা করতাম। ২৪ ঘন্টার মাঝে বেশির ভাগ সময় আমরা এক সাথে কাটাতাম।
একবার আমি মামার বাড়ি যাই মামার সাথে। একটা বিয়ের অনুষ্ঠান থাকে বলে প্রায় ১ সপ্তাহেরর মত ওই খানে থাকি। কিন্তু লাবন্যকে খুব মিস করি। পরে যখন বাড়িতে এসে লাবন্যদের ঘরে যাই কিন্তু ওদের ঘর খালি দেখে সরাসরি মায়ের কাছে গেলাম। মা বলে লাবন্যর বাবার নাকি বদলি হয়ে গেছে। যার কারনে ওনারা দুইদিন আগে চলে গেছে। কিন্তু লাবন্য নাকি আমায় একটা গিফট দিয়ে গেছে। গিফটের বক্স খুলে দেখি খুব ছোট একটা পুতুল। যার বুকে লেখা ছিল লাভ ইউ। তখন থেকে এই মেয়েটারে খুব মিস করতে শুরু করি। আর প্রতিদিন স্কুল থেকে এসেই ওই পুতুলটাকে একবার হলেও দেখতাম। যখন আমি এস.এস.সি পাশ করি তখন ওই পুতুলটাকেই যেন ভালবাসতে থাকি আর আমার আবেগ গুলো জমাতে থাকি। কখনো নিজের থেকে আলাদা করি নি পুতুল টাকে। আস্তে আস্ত একটা অজানা বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করে আমার আবেগ গুলো ভালবাসার রূপ নেয়। আর এই কারনে আজও আমি অন্য কোন মেয়েদের সাথে মিশি না। কিন্তু কখনো ভাবি নি সেই হঠাৎ বৃষ্টির কারনে এই মেয়েটাকে আবার আমি ফিরে পাবো। ও এখন এই ভার্সিটিতে কম্পিউটার ডিপার্টমেন্টে ২য় বর্ষের ছাত্রী।
-- ওরে বাবা তোদের প্রেমেরর কাহিনী তো লাইলি মজনু,শিরি ফরহাদ,আর হিরা পান্নার কাহিনীকে ফেল করে দিলো।
আমি চুপ করে রইলাম তখন নিলয় বলল.....
-- দোস্ত আর লেট করিস না ওরে বলে দে তোর মনের কথা। নয়ত যদি আবার হারিয়ে যায়।
সেই দিন আর ভার্সিটিতে না থেকে বাড়ি চলে আসলাম। বাড়িতে এসেই আমার টেবিলের ড্রয়ার থেকে সেই পুতুলটা বের করলাম। এটাকে নিয়ে ভাবতে ভাবতে আবার সময়টা বার করে দেই।
সকালে ঘুম থেকে উঠেই ফ্রেশ হয়ে ভার্সিটিতে চলে যাই। তারপর নদীরে ফোন দেই...
-- কিরে এতো সকালে কি হলো?
-- আমি ভার্সিটিতে আছি। তারাতারি আয়।
-- মাত্র আট টা বাজে। এতো সকালে কী হলো? ও লাবন্যের প্রেমে দেবদাস হয়ে বুঝি ঘুম হয় নি।
-- ওই তুই তারাতারি আয়। আমি নিলয়রে ফোন দিতাছি।
ফোনটা কেটে দিয়ে নিলয়রে ফোন দিলাম। তারপর ওরে আসতে বললাম। আজ কেন জানি সময় পার হচ্ছে না। মনে হচ্ছে আমি যদি ঘড়িট সময়টাকে বাড়িয়ে দিতে পারতাম। একটা মিনিট আমার কাছে একটা ঘন্টার মত মনে হচ্ছে। অনেক খন পার হওয়ার পর নদী আর নিলয় আসলো......
-- কিরে দেবদাস তোর পারুল আসছে?
-- না।
-- আচ্ছা ধর যদি আজ ও না আসে তাহলে তুই কি করবি?
-- কিছু না কারন গেটের দিকে তাকিয়ে দেখ ও আসছে। আমি যাই।
-- অল দি বেস্ট দোস্ত
দৌড়ে ওর সামনে গিয়ে হাজির হলাম। ও কিছুটা অবাক হয়ে গেল।
-- আর রাজ সাহেব এতো দৌড়াচ্ছিলেন কেন?ডাইয়াবেটিস ধরা পরলো নাকি?
-- আরে না।
-- তাহলে?
-- আসলে তোমায় একটা কথা বলার আছে?
-- কি?
-- তুমি কি আমার বন্ধু হবে তাহলে চকলেট দিবো?
--( ও খুব অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে রইলো)
-- কি হলো কিছু বলো?
-- আমি তো কোন ছেলের বন্ধু হই না।
-- কেন?
-- সেটা আপনার না জানলেও চলবে?
তারপর পুতুলটা বের করে ওর সামনে ধরলাম। এটা দেখে ও থমকে গেল। ও আমায় কি যেন বলতে চাইছে কিন্তু বলতে পারছে না। তখন আমি বললাম....
-- বন্ধুত্ব ছিল বাহানা তবে বন্ধু না হয়ে কি তোমার পাশে হাটার অধিকারটা পেতে পারি। কথা দিচ্ছি কখনো হারাতে দিবো না। অনেক খুজে তোমায় পেয়েছি।খুব ভালবাসবো তোমায়।
-- সেই রাজ তুমি?
-- হুমম আমি সেই রাজ যে........
--যে আমায় প্রতিদিন চকলেট দিতো। আমার চুল টেনে দৌড় দিতো আর আমার চিমটি গুলো সহ্য করতো।
--হুমম সেই রাজ আমি। সেই অধিকার গুলো আবার ফেরত চাই। প্রমিস আর হারাতে চাই না।
ও চুপ করে আছে তাই আমি বললাম...
-- তোমার হাতটা কি ধরতে পারি?
-- হাত ধরে কি হবে?
আর কোন কথা না বলে ওর হাতটা ধরেই ফেললাম আর বললাম চলো মিস চকলেট কিনে নিয়ে আসি
বি:দ্র: বাস্তব আর গল্প হাজার বেমিল তবে মিলে গেলে তার থেকে সুখ আর কি থাকে?
Post a Comment