ফ্রেশারসদের বলছি, পজিটিভ অর্থে ঈর্ষান্বিত হোন, লাগাতার জানার চেষ্টা করুন—সামনের দিনটি অবশ্যই আপনার!
ফ্রেশারসদের বলছি, পজিটিভ অর্থে ঈর্ষান্বিত হোন, লাগাতার জানার চেষ্টা করুন—সামনের দিনটি অবশ্যই আপনার!
ব্যক্তিগতভাবে আমার প্রিয় বিষয় হলো, জানার তীব্র আগ্রহ ও সে জন্য প্রায় সব রকমের প্রয়াস চালিয়ে যাওয়া। সম্ভবত এই তীব্রতার জন্যই আমার আশে-পাশে কেউ যদি আমার চেয়ে বেশি জানে, তবে আমি এত বেশি ঈর্ষাকাতর হয়ে পড়ি যে, সেই ব্যক্তি যে বিষয়ে আমার চেয়ে বেশি জানে বা পারদর্শী, সে বিষয়ে জানার জন্য মরিয়া হয়ে উঠি! তবে তার প্রশংসা করতে দ্বিধা করি না এবং এমন কিছুই করি না, যাতে তার ক্ষতি হয় বা হেয় প্রতিপন্ন হয়। আমার এই মরিয়া ভাব শুধুই জানার জন্য এবং তা করতে গিয়ে আমি চারপাশে যখন যা পেয়েছি সংগ্রহ করেছি এবং আজও করি। যেমন ধরুন পুরোনো বা নতুন কোনো বই, গুরুত্বপূর্ণ খবরের টুকরো, কোনো ভাল সিনেমা বা গান, কিংবা কোনো সিনিয়র অফিসারের ড্রাফট করা অফিসিয়াল লেটারের কপি, ভাল কোনো সিভি স্যাম্পল কিংবা অফিসিয়াল ফরম্যাট, ক্রিয়েটিভ পেইন্টিং বা বিজনেজ কার্ডের কপি, ভালো কোনো লোগো বা বিজনেস স্লোগান, শিক্ষনীয় কোনো আর্টিক্যাল—এমন শত রকমের জিনিস আমি সমানে সংগ্রহ করি। শুধু যে সংগ্রহ করার জন্য কাজটি করি তা নয়, বরং অবসর সময়ে সেগুলো থেকে আমার ক্ষমতা অনুযায়ী শেখার বা জানার চেষ্টা করি।
যাই হোক, যেখান থেকে লেখা শুরু করেছিলাম, তো আমার ঈর্ষা আমাকে এমন অনেক বিষয়েই বেশি না হোক অল্প-বিস্তর দক্ষ করে তুলেছে, যা বরং পরবর্তী জীবনে নানা ভাবে কাজে এসেছে। যেমন একদম শুরুর দিকে বালক বয়সে ইলেকট্রিশিয়ানকে ঈর্ষা করে নিজেই ইলেকট্রিক কাজ শিখতে গিয়ে পুরো বাড়ির সমস্ত ইলেকট্রিক তার পুড়িয়ে ফেলেছিলাম। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আমি বিষয়টি জেনেছিলাম এবং আজ ২০/২৫ বছর আমাকে আর ইলেকট্রিশিয়ানের দ্বারস্থ হতে হয়নি খুঁটি-নাটি গৃহস্থালি ইলেকট্রিক কাজগুলো করার জন্য। একদম বাল্যকাল থেকেই আমি জানার জন্য আমার তীব্র আগ্রহকে বিন্দুমাত্র স্তিমিত হতে দিই নি, বরং নিজেকেই বারবার উসকে দিয়েছি জানার জন্য মরিয়া হয়ে উঠতে ও ঈর্ষান্বিত হতে। আর আমার চলমান সেই ঈর্ষার সর্বশেষ প্রয়াস ছিল প্রোগামিং (কোডিং) ও ইথিক্যাল হ্যাকিং শেখা, কেন না আমার অফিসের আই.টি. ছেলেটি ছিল এই বিষয়ে ভাল ও রীতিমতো দক্ষ। বেশ কিছুদিন কাজটি করলাম এবং লিনাক্স অপারেটিং সম্পর্কে ধারণা তো পেলামই, সেই সাথে প্রতিবেশির ওয়্যারলেস হ্যাকও করলাম। খুব বেশি দক্ষ হয়ে উঠতে পারিনি, তবে জানার যে জায়গাটিতে আগ্রহ ছিল, সেটা পূর্ণ হয়েছে।
এতগুলো কথা বলার কারণ একটি, আপনি যখন ফ্রেশার এবং প্রফেশনাল জীবনে পদার্পণ করতে যাচ্ছেন, তখন আপনাকে আমার মতো ঈর্ষান্বিত হতে হবে এবং শিক্ষাজীবনের জানার বাইরে এসে আরও অনেক কিছুই জানতে হবে, যেখানে জানার জন্য আপনার সদইচ্ছা ও তীব্র আগ্রহই আপনাকে অনেক দূর নিয়ে যাবে।
আমার তো মনে হয় বর্তমান প্রজন্মের যুবকরা অনেক বেশি সৌভাগ্যবান ও বিজ্ঞানের আশীর্বাদপ্রাপ্ত, কেন না আমাদের সময়ে এত বিস্তৃতভাবে গুগল ছিল না, ইউটিউব ছিল না, নেটব্যবহার করতে শিখেছি, তাও কর্মক্ষেত্রে এসে। আমাদের সময়ে হাতের কাছে রিসোর্স ছিল সামান্য বা অপ্রতুল, কিন্তু আপনারা এমন এক সময়ে বাস করছেন, যেখানে শুধুমাত্র ক্লিক নয়, বরং একেবারে হাতের মুঠোয় সবকিছু পেয়ে যেতে পারেন নিমিষেই। সুতরাং, এমন এক সময়ে যখন আপনি প্রয়োজনীয় কিছু জানেন না, তখন আপনাকে ক্ষমা করা যায় না। জানার জন্য, নিজেকে তৈরী করার জন্য, তাই আপনাকেই এগিয়ে আসতে হবে সর্বাগ্রে। আমি বাজি ধরে বলতে পারি, শুধুমাত্র জানার ইচ্ছে থেকেই আপনি আগামী এক/দুই বছরে নিজেকে সম্পূর্ণ বদলে ফেলতে পারেন। এখন আপনি আমাকে প্রশ্ন করতে পারেন, তাহলে আমাকে কি কি করতে হবে?
ঠিক এখান থেকেই আপনার ভুলটি শুরু, কেন না প্রশ্নটি আমাকে করার চেয়ে আপনি বরং নিজে খুঁজে বের করুন যে, আপনি এমন একটি প্রশ্নের উত্তর ভিন্নভাবে পেতে পারেন কিনা, কিংবা অন্য কোনো উপায় আছে কিনা এমন প্রশ্নের উত্তর জানার। প্রথম অপশনটি বা ব্যক্তিকে ব্যবহার না করে, নিজেকে আগে ব্যবহার করুন, আর সেক্ষেত্রে আপনার সবচেয়ে ভাল সহযোগি হতে পারে গুগল। তবে গুগলকে ব্যবহার করার আগে নিজেকে বিচার করুন, নিজের দুর্বলতম জায়গাগুলো খুঁজে বের করুন। তারপর সেই দুর্বলতাগুলো দূর করার জন্য এগিয়ে যান বা পদক্ষেপ নিন।
এখন আপনার পাল্টা প্রশ্ন হতে পারে, কিভাবে গুগল ব্যবহার করব। সেখানেও আমার আপত্তি, আপনি আগে শুরু তো করুন। কোনো একটি বিষয় নিয়ে গুগলে খোঁজার চেষ্টা করুন। প্রথম দিকে আশানুরূপ ফলাফল নাও পেতে পারেন, কিন্তু যখন আপনি লাগাতার কাজটি করতে থাকবেন, তখন নিজে নিজেই দক্ষ হয়ে উঠবেন, আর এই নিজে করার প্রয়াসটি নেই বলেই আপনাকে বারবার অন্যের দারস্থ হতে হয়, সব বিষয়েই।
চাকুরীর ক্ষেত্রে ফ্রেশারসদের যে মূল সমস্যা আমি প্রত্যক্ষ করেছি, তারা শিক্ষাজীবনে যেমন জানে কম (কিংবা সেই জানাটা পরীক্ষা পাস করা ভিন্ন অন্য কাজে লাগানোর উপযোগি করে নিজেদের তৈরী করে না), তেমনি শিক্ষাজীবনের বাইরে আরও অনেক কম জানে। শুধু তাই নয়, তারা শেখার জন্য নিজেদের মধ্যে তীব্র আগ্রহ তৈরী করতে ব্যর্থ। যদিওবা আগ্রহ তৈরী করতে সক্ষম হয়, তবে তা কিছু সময়ের জন্য, বছরের পর বছর তা চালু রাখার মতো ধৈর্য্য ও দৃঢ় মানসিকতা তাদের মধ্যে থাকে না। এক্ষেত্রে আমার নিজের একটি অভিজ্ঞতা শেয়ার করি।
অজো পাড়া-গায়ে পড়ালেখা করার দরুণ আমি এডভান্ডস লেভেলে ভাবার মতো কোনো প্রকার পরিবেশের সাথে যেমন সম্পৃক্ত হতে পারি নি, তেমনি বাংলা ছাড়া অন্য কোনো ভাষায় দক্ষ হতে পারি নি। ২০০১ সালে বি.এস.সি পাস করার পর (সেটাও গ্রাম থেকে) যখন প্রথম ইন্ডিয়ান কোম্পানীতে জয়েন করলাম, সেখানে এক ইন্ডিয়ান ইঞ্জিনীয়ার এর সামনে ইংরেজি বলতে গিয়ে এমনভাবে বাক্য গঠন করলাম যে, রীতিমতো হাসির পাত্রে পরিণত হলাম। সেদিন জিদ চেপেছিল যে, যত বছরই লাগুক না কেন ইংরেজি বিষয়টিতে আমি অবশ্যই দক্ষতা অর্জন করব, অন্তত প্রফেশনাল জীবনে যেন আর কখনও আমাকে হাসির পাত্র হতে না হয়। এরপর আজ ১৬টি বছর কেটে গেল, আমি এখনও আমার সেই জিদ ও ইচ্ছার সাথে অবিচল রয়েছি। না, সে জন্য আমি কখনও ইংরেজি শেখার জন্য কোনো কোর্স করিনি, কারও কাছে কোনো প্রকার সহযোগিতা চাইনি, বরং নিজে নিজেই ইংরেজি শেখার জন্য যেসব পদক্ষেপ নিয়েছিলাম, তার মধ্যে ৩টি মেজর কাজ ছিল, ১. নিয়মিত ইংরেজি ভাষার সিনেমা দেখা, ২. যত কঠিনই হোক না কেন, সাবটাইটেলসহ অন্যান্য ভাষার সিনেমা দেখা (এভাবে আমি হাজার হাজার সিনেমা দেখেছি, যা কিনা পরবর্তীতে আমাকে একজন মুভি রিভিওয়ার হিসেবে গড়ে তুলেছে। অর্থাৎ, আপনার যে কোনো প্রয়াসই আপনাকে কোথাও না কোথাও নিয়ে যাবে, যদি আপনি লাগাতারভাবে লেগে থাকেন ও পরিশ্রম করেন), ৩. প্রতিদিন সকাল ও রাতে কম করেও ১ ঘন্টা বিবিসি ব্রডকাস্টিং শোনা। এছাড়াও অন্যান্য যেসব কাজ করেছিলাম বা আজও করি, যে কোনো ইংরেজি লেখা পেলেই পড়া শুরু করা; যত ভুল ভাবেই ইংরেজিতে কথা বলি না কেন (এমনকি He এর ক্ষেত্রে She কিংবা She এর ক্ষেত্রে He ব্যবহার করলেও) ইংরেজিতে কথা বলার চেষ্টা করা। যদি সেটা সম্ভব না হয়, তখন মোবাইল বা কম্পিউটার এ নিজেই নানাবিধ টপিক নিয়ে আবোল-তাবোলভাবে ইংরেজিতে কথা বলি ও রেকর্ড করে পরে শুনি। আমি কাজগুলো লাগাতারভাবে আজও করি এবং এত দীর্ঘ সময় হাল ছাড়ি নি, কারণ আমার মনে হয়েছে আমি এখনও খুবই বাজে ইংরেজিতে।
সুতরাং, আপনার জিদ থাকতে হবে এবং একাগ্রতা নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। খুব দামি কোনো ইন্সটিটিউট এর সার্টিফিকেট পেতে আপনার অর্থের প্রয়োজন হতে পারে, কিন্তু আপনি যদি বর্তমান সময়ে জানতে চান, শিখতে চান, তবে শুধু ইন্টারনেট থাকলেই আপনার আগ্রহের সকল কিছুই জানতে পারবেন। Khan Academy (www.khanacademy.org) কিংবা EDX (www.edx.org) এর মতো অনেক প্রয়াসই এখন বিস্তৃতভাবে চালু হয়েছে এবং সামনের দিনগুলোতে শিক্ষা বিষয়টি অনেকটাই ফ্রি হয়ে যাবে। কিন্তু, হলেও কি তা আপনার কোনো কাজে আসবে, যদি না আপনার শেখার জন্য তীব্র ইচ্ছা থাকে। এই একটিমাত্র বিষয়ই আপনাকে জীবনে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে, নতুবা যেভাবেই আপনাকে উদ্বুদ্ধ করা হোক বা শেখানো হোক না কেন, তা আপনার কোনো কাজে আসবে না।
ধরুণ, কেউ হয়ত আপনাকে বলল যে, আপনার সিভিটি লেখা ঠিক হয়নি। আপনি শুনে হয়ত দমে গেলেন। তখন আপনার জায়গায় আমি হলে বিষয়টি নিয়ে ভাবতাম। গুগল করতাম, গুগলে গিয়ে সার্চ করতাম এভাবে,
Best CV samples for freshers, CV writing tips for freshers, CV samples for fresh BBA graduates, CV samples for CSE graduates—এভাবে নিজের প্রয়োজন অনুসারে একের পর এক টপিক এ সার্চ করতাম এবং লাগাতারভাবে তা করেই যেতাম। পরে সেখান থেকে আমার প্রয়োজন অনুসারে CV Samples কালেক্ট করতাম, সেগুলো স্টাডি করতাম ও জানার চেষ্টা করতাম যে কিভাবে তারা সিভি লিখছে বা লিখতে বলছে এবং আমি কোন ভুলগুলো করেছি। এরপর নেটে বিভিন্ন প্রফেশনালসদের পোস্ট পড়তাম, যেখানে তারা অনেকট টিপস দিয়ে থাকে যে, কিভাবে সিভি লিখতে হয় বা লেখা উচিত। কিন্তু আপনি তা করতে চান না, বরং আপনি নিজের অলসতার দরুণ বা নিজের উপর বিশ্বাসহীনতার কারণে সিভি রাইটারদের শরণাপন্ন হোন। কিন্তু, আপনি এই বাস্তবতাটি ভুলে বসে আছেন, তারা আপনাকে তথ্যগত ধারণা দেবে ঠিকই, কিন্তু শেখার বা জানার কাজটি আপনার নিজেকেই করতে হবে, যেটা আপনি নিজে চাইলেও করতে পারেন।
এরপর ধরুন ইন্টারভিউ টিপস। আপনি কি জানেন, ইউটিউবে লক্ষ লক্ষ শিক্ষনীয় ভিডিও আছে ক্যারিয়ার ও ইন্টারভিউ সম্পর্কিত। শুধু কি তাই, বিভিন্ন পোস্টে স্যাম্পল ইন্টারভিউ কোয়েশ্চেন এর এত লক্ষ লক্ষ পোস্ট আছে নেটে যে, আপনি সারাজীবন পড়েও শেষ করতে পারবেন না। কিন্তু সেগুলো সংগ্রহ করে পড়ার পরিবর্তে আপনি আপনার না জানার সমস্যাটিকে দিনে দিনে প্রকট করে তুলেছেন, অথচ আপনি কখনও কি ভেবে দেখেছেন, যতটা সময় আপনি ফেসবুক, সিনেমা দেখা, গান শোনা, বন্ধুদের সাথে আড্ডা, কিংবা নিতান্তই হোয়াটস অ্যাপ বা ইমো এই জাতীয় অ্যাপ ব্যবহারে নষ্ট করেন, তার ৫০% ও যদি আপনি শেখার বা জানার জন্য ব্যয় করতেন, আপনি এত কিছু জানতে বা শিখতে পারতেন যে, আপনাকে কারও দারস্থ হতে হতো না। যে কোনো বিষয়ে জানুন, প্রয়োজন না হলেও জানুন, তাতে আপনার জানার যে আগ্রহ তা টিকে থাকবে, আপনি এগিয়ে যাবেন এবং কখনও না কখনও তা আপনার কাজে আসবে।
ইন্টারভিউ নিয়ে আমার বেশি কিছু বলার নেই, শুধু বলব, আপনি যেটুক জানেন, সেটুকু আর একটু ভাল করে ঝালাই করে নিন ইন্টারভিউ দিতে যাবার আগে এবং যে পোস্টের জন্য ইন্টারভিউ দিতে যাচ্ছেন, সেই পোস্টটির কি কি জব রেসপন্সিবিলিটি রয়েছে সেগুলো কয়েকবার পড়ে বোঝার চেষ্টা করুন যে, আপনার জানার জায়গাগুলোর সাথে কোথায় কোথায় তা মেলে। যেগুলো মেলে না, সেগুলো নোট করে রাখুন। পরবর্তীতে সেগুলো জানার চেষ্টা করুন আর এক্ষেত্রেও গুগল হতে পারে আপনার সবচেয়ে বিশ্বস্ত সহযোগি। আর যে কোম্পানীতে যাচ্ছেন ইন্টারভিউ দিতে, সে কোম্পানী সম্পর্কে অবশ্যই কিছু জানার চেষ্টা করুন, এটা ইন্টারভিউ এর জন্য অতীব জরুরী না হলেও (কারণ ফ্রেশারসদের এই বিষয়ে খুব বেশি প্রশ্ন করা হয় না বলেই আমার বিশ্বাস, যখন ইন্টারভিউ কর্মকর্তা জানেনই যে প্রার্থী ফ্রেশ), ক্যারিয়ার এ আপনার কাজে আসবে কোনো না কোনো ভাবে। শেষ কথা, দরকার নেই আপনার ইংরেজিতে ইন্টারভিউ দেবার। আপনি যথাযথ বাক্য গঠন করতে জানলে ইংরেজি ছাড়া কেবল বাংলাতেই ইন্টারভিউ দিন। কিন্তু, কোনো অবস্থাতেই বাংলা বলতে বলতে হঠাৎ ইংরেজিতে বলা শুরু করবেন না এবং শুরু করলে মাঝ পথে আটকে গিয়ে আমতা আমতা করবেন না। এই কাজটি আমি অনেক প্রার্থীকেই করতে দেখেছি, এমন কি আমি নিজে বাংলাতে প্রশ্ন করলেও দেখি হঠাৎ ইংরেজিতে উত্তর দেওয়া শুরু করে এবং মাঝপাথে গিয়ে আটকে যায় কিংবা এমন সব বাক্যগঠন করে যে, মুহূর্তকালীন আগের স্বাভাবিক পরিবেশটি নষ্ট করে দিয়ে প্রার্থী নিজের দৈন্যতা প্রকাশ করে, যখন তার কোনো প্রয়োজন-ই ছিল না। তবে যদি আপনাকে ইংরেজি বলতে বলে, তবে অবশ্যই বলবেন, নতুবা সোজা-সাপ্টা পরিস্কার বাংলায় আপনার উত্তর দিন। আমাদের দেশে খুব ভাল বাংলা বলার লোকজন এখন খুবই কম।
আর ছাত্রজীবনে যেসব ইমেইল আইডি ব্যবহার করেছেন, যেমন-jiniasumon, akashjol, neelmegh, rockers, mamun1234, humayun1981, tarekbd, salemanhaider, salesbd, salesmamun (মেইল আইডিগুলো কাল্পনিক, কারও সাথে মিলে গেলে আমি দুঃখিত), এই জাতীয় মেইল আইডিগুলো বাদ দিন CV থেকে। যদি নিতান্তই মনে হয় যে, আপনি এই মেইল আইডিটি কখনোই ছাড়তে পারবেন না, তাহলে আপনাকে জানিয়ে রাখি, আপনি চাইলে কয়েকটি মেইল আইডি ব্যবহার করতে পারবেন একসাথে এবং আপনি চাইলে একটিমাত্র মেইল আইডিতেই সবগুলো আইডি থেকে মেইল রিসিভ করতে পারবেন। এমনকি একটিতে লগইন থেকেই অন্য আইডি থেকে মেইল পাঠাতেও পারবেন।সুতরাং, এমন একটি মেইল আইডি ব্যবহার করুন, যেটা প্রফেশনাল (উপরে বর্ণিত গুলোর মতো নয়) এবং প্রতিটি জব এ্যাপ্লিকেশন আপনার সেই মেইল আইডি থেকে পাঠান। এখন আপনি যদি আমাকে জিজ্ঞেস করেন, কিভাবে সবগুলো আইডির মেইল একটি আইডিতে রিসিভ করব, তাহলে বলব, প্লিজ গুগলকে জিজ্ঞেস করুন (দু’দিন আগে নিউজ দেখলাম, গুগল নাকি এখন সরাসরি বাংলা ভয়েস এও সার্চ সাপোর্ট করে, তাহলে না হয় বাংলাতেই গুগলকে জিজ্ঞেস করুন) এবং এই একটি দিয়েই না হয় আপনার গুগল ব্যবহার শেখা শুরু হোক। তারপরও বলি, জিমেইল এ্যাকাউন্টের সেটিংস এ আপনি অপশনটি পাবেন, বাকিটুকু আপনি নিজে করুন, কেন না নিজে করতে গিয়ে সবসময়ই জানার জায়গাটি বিস্তৃত ও পোক্ত হয়।
অনেকেই দেখি সংখ্যা ও নানা রকম অদ্ভুত শব্দ দিয়ে মেইল আইডি তৈরী করেন, বলেন, নিজের নাম দিয়ে এ্যাকাউন্ট আইডি পান না। তবে একটা ছোট্ট টিপস দিই, যদি কখনও দেখেন আপনার নাম দিয়ে মেইল আইডি পাচ্ছেন না, তখন mail ডট দিয়ে ট্রাই করুন (mail.tarikulislam), আমার বিশ্বাস পেয়ে যাবেন। মনে রাখবেন, একটি প্রফেশনাল মেইল আইডি অবশ্যই আপনার ব্যক্তিগত বিচক্ষণতার দিকটি নির্দেশ করে।
আর CV তে ৩/৪টি মোবাইল নম্বর দেবার দরকার নেই। একটিই যথেষ্ট, খুব বেশি হলে দুইটি। কিন্তু সেই মোবাইল নম্বরটিই দিন, যেটি আপনি নিজে ব্যবহার করেন। দয়া করে, বাবা-মা বা স্বামীর মোবাইল নম্বরটি দেবেন না। আমি অনেকবার এই বিড়ম্বনায় পড়েছি যে, স্বামী বা বাবা সরাসরি আমাকে বলছেন, বলুন কি বলবেন বা জিজ্ঞেস করবেন। কিন্তু তাদের কি করে বোঝাই, আমি ফোন করেছি 'ওভার ফোন ইন্টারভিউ' নেবার জন্য, তাদেরকে কি বলব আর কি জিজ্ঞেস করব?
আরও একটি জরুরী ব্যাপার যেটা আমি শত শত চাকুরীপ্রার্থীকে করতে দেখেছি, কাঙ্খিত বেতনের ঘরে শূন্য (০) লেখা। আপনার কাঙ্খিত বেতন যদি শূন্য হয়, তবে আপনাকে কোম্পানীতে ডেকে চাকুরী দেবার কোনো মানে নেই। সুতরাং, আপনার কাঙ্খিত বেতনের ঘরে সেই বেতনটিই উল্লেখ করুন, যে বেতনে আপনি সারভাইভ করতে পারবেন। তবে খেয়াল রাখবেন, এই কাঙ্খিত বেতন উল্লেখ করতে গিয়ে এই ভুলটি করবেন না (যেটি করতেও দেখেছি অনেক প্রার্থীকে), বর্তমান বেতনের ঘরে কাঙ্খিত বেতন ও কাঙ্খিত বেতনের ঘরে বর্তমান বেতন লিখবেন না। মাঝে মাঝেই এই বিড়ম্বনায় আমাকে পড়তে হয়, দেখি চাকুরীপ্রার্থী তার বর্তমান বেতনের ঘরে ১৫০০০ লিখলেও, কাঙ্খিত বেতনের ঘরে লিখেছেন আরও কম। বিষয়টি সত্যিকার অর্থেই আপনার নেতিবাচক দিকটি প্রবলভাবে তুলে ধরে, ফলে এই বিষয়গুলো অবশ্যই খেয়াল রাখবেন ও জব পোর্টালে আপনার পোস্ট করা সিভিটি অবশ্যই মাঝে মাঝে আপডেট করবেন।
পরিশেষে বলি, আর্থিক কষ্ট বা সুযোগের অপ্রতুলতা আমাদের দেশের যুবসমাজের জন্য বিশাল এক সমস্যা। কিন্তু আপনাকে জানিয়ে রাখি, এই বাস্তবতার ভুক্তভোগি আপনি একা নয়, বরং আমি-আপনি উভয়েই লাগাতার সংগ্রাম করে যাচ্ছি এবং ব্যক্তিগতভাবে আমি জীবনের এই মুহূর্তে এসে এই মহামূল্যবান অভিজ্ঞতাটি অর্জন করেছি যে, যদি কেউ আমাকে নিশ্চিতভাবে বলে যে, আপনার কাছে মাত্র ১ মিনিট সময় আছে জীবনের, তবে আমি সেই ১ মিনিটও আশা ছাড়ব না, বরং সেই ১ মিনিটও জীবনের দিকেই আশা নিয়ে এগিয়ে যাব। অনেকেই হয়ত বলবে, এমনটি মুখে বলা সহজ, কিন্তু বাস্তবে করা কঠিন। আমিও বলব, আলবৎ করা কঠিন আর এই কঠিন কাজটি যারা করতে সমর্থ হয়েছে, তারাই জীবনে এগিয়েছে, সাফল্য অর্জন করেছে। তাছাড়া, জীবন অভিজ্ঞতা তো একদিনের বিষয় নয়, বছরের পর বছরের অর্জন এবং সেটা আপনাকেই অর্জন করতে হবে আর আপনি তা কিভাবে করবেন, সেটা নিজেই নির্ধারণ করুন।
তাই বলব, যত বিরূপই হোক না কেন জীবনের পরিস্থিতি, আশা হারাবেন না, কেন না আপনি মানুষ এবং যতক্ষণ বেঁচে আছেন, টিকে থাকার জন্য সব রকমের চেষ্টাই আপনি করবেন, করতে আপনি বাধ্য, কেন না জীবন চলমান এক প্রক্রিয়া, এটা যতক্ষণ বর্তমান আপনি নিজেও সেই চলমানতার অংশ, আপনাকে আপনি নিজে থামাতে ব্যর্থ, যদি না মৃত্যু এসে আপনাকে থামিয়ে দেয়। তাই বলব, এগিয়ে যেতে, টিকে থাকতে যখন আপনি বাধ্য, তখন আশা ছাড়বেন কেন, আশাটুকু নিয়েই না হয় এগিয়ে যান, টিকে থাকুন।
সবার মঙ্গল হোক। জানার তীব্র আগ্রহ যে কোনো মূল্যে বাঁচিয়ে রাখুন নিজের মধ্যে।
Written by
Tarikul Islam
Manager-HR at AB Group
ব্যক্তিগতভাবে আমার প্রিয় বিষয় হলো, জানার তীব্র আগ্রহ ও সে জন্য প্রায় সব রকমের প্রয়াস চালিয়ে যাওয়া। সম্ভবত এই তীব্রতার জন্যই আমার আশে-পাশে কেউ যদি আমার চেয়ে বেশি জানে, তবে আমি এত বেশি ঈর্ষাকাতর হয়ে পড়ি যে, সেই ব্যক্তি যে বিষয়ে আমার চেয়ে বেশি জানে বা পারদর্শী, সে বিষয়ে জানার জন্য মরিয়া হয়ে উঠি! তবে তার প্রশংসা করতে দ্বিধা করি না এবং এমন কিছুই করি না, যাতে তার ক্ষতি হয় বা হেয় প্রতিপন্ন হয়। আমার এই মরিয়া ভাব শুধুই জানার জন্য এবং তা করতে গিয়ে আমি চারপাশে যখন যা পেয়েছি সংগ্রহ করেছি এবং আজও করি। যেমন ধরুন পুরোনো বা নতুন কোনো বই, গুরুত্বপূর্ণ খবরের টুকরো, কোনো ভাল সিনেমা বা গান, কিংবা কোনো সিনিয়র অফিসারের ড্রাফট করা অফিসিয়াল লেটারের কপি, ভাল কোনো সিভি স্যাম্পল কিংবা অফিসিয়াল ফরম্যাট, ক্রিয়েটিভ পেইন্টিং বা বিজনেজ কার্ডের কপি, ভালো কোনো লোগো বা বিজনেস স্লোগান, শিক্ষনীয় কোনো আর্টিক্যাল—এমন শত রকমের জিনিস আমি সমানে সংগ্রহ করি। শুধু যে সংগ্রহ করার জন্য কাজটি করি তা নয়, বরং অবসর সময়ে সেগুলো থেকে আমার ক্ষমতা অনুযায়ী শেখার বা জানার চেষ্টা করি।
যাই হোক, যেখান থেকে লেখা শুরু করেছিলাম, তো আমার ঈর্ষা আমাকে এমন অনেক বিষয়েই বেশি না হোক অল্প-বিস্তর দক্ষ করে তুলেছে, যা বরং পরবর্তী জীবনে নানা ভাবে কাজে এসেছে। যেমন একদম শুরুর দিকে বালক বয়সে ইলেকট্রিশিয়ানকে ঈর্ষা করে নিজেই ইলেকট্রিক কাজ শিখতে গিয়ে পুরো বাড়ির সমস্ত ইলেকট্রিক তার পুড়িয়ে ফেলেছিলাম। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আমি বিষয়টি জেনেছিলাম এবং আজ ২০/২৫ বছর আমাকে আর ইলেকট্রিশিয়ানের দ্বারস্থ হতে হয়নি খুঁটি-নাটি গৃহস্থালি ইলেকট্রিক কাজগুলো করার জন্য। একদম বাল্যকাল থেকেই আমি জানার জন্য আমার তীব্র আগ্রহকে বিন্দুমাত্র স্তিমিত হতে দিই নি, বরং নিজেকেই বারবার উসকে দিয়েছি জানার জন্য মরিয়া হয়ে উঠতে ও ঈর্ষান্বিত হতে। আর আমার চলমান সেই ঈর্ষার সর্বশেষ প্রয়াস ছিল প্রোগামিং (কোডিং) ও ইথিক্যাল হ্যাকিং শেখা, কেন না আমার অফিসের আই.টি. ছেলেটি ছিল এই বিষয়ে ভাল ও রীতিমতো দক্ষ। বেশ কিছুদিন কাজটি করলাম এবং লিনাক্স অপারেটিং সম্পর্কে ধারণা তো পেলামই, সেই সাথে প্রতিবেশির ওয়্যারলেস হ্যাকও করলাম। খুব বেশি দক্ষ হয়ে উঠতে পারিনি, তবে জানার যে জায়গাটিতে আগ্রহ ছিল, সেটা পূর্ণ হয়েছে।
এতগুলো কথা বলার কারণ একটি, আপনি যখন ফ্রেশার এবং প্রফেশনাল জীবনে পদার্পণ করতে যাচ্ছেন, তখন আপনাকে আমার মতো ঈর্ষান্বিত হতে হবে এবং শিক্ষাজীবনের জানার বাইরে এসে আরও অনেক কিছুই জানতে হবে, যেখানে জানার জন্য আপনার সদইচ্ছা ও তীব্র আগ্রহই আপনাকে অনেক দূর নিয়ে যাবে।
আমার তো মনে হয় বর্তমান প্রজন্মের যুবকরা অনেক বেশি সৌভাগ্যবান ও বিজ্ঞানের আশীর্বাদপ্রাপ্ত, কেন না আমাদের সময়ে এত বিস্তৃতভাবে গুগল ছিল না, ইউটিউব ছিল না, নেটব্যবহার করতে শিখেছি, তাও কর্মক্ষেত্রে এসে। আমাদের সময়ে হাতের কাছে রিসোর্স ছিল সামান্য বা অপ্রতুল, কিন্তু আপনারা এমন এক সময়ে বাস করছেন, যেখানে শুধুমাত্র ক্লিক নয়, বরং একেবারে হাতের মুঠোয় সবকিছু পেয়ে যেতে পারেন নিমিষেই। সুতরাং, এমন এক সময়ে যখন আপনি প্রয়োজনীয় কিছু জানেন না, তখন আপনাকে ক্ষমা করা যায় না। জানার জন্য, নিজেকে তৈরী করার জন্য, তাই আপনাকেই এগিয়ে আসতে হবে সর্বাগ্রে। আমি বাজি ধরে বলতে পারি, শুধুমাত্র জানার ইচ্ছে থেকেই আপনি আগামী এক/দুই বছরে নিজেকে সম্পূর্ণ বদলে ফেলতে পারেন। এখন আপনি আমাকে প্রশ্ন করতে পারেন, তাহলে আমাকে কি কি করতে হবে?
ঠিক এখান থেকেই আপনার ভুলটি শুরু, কেন না প্রশ্নটি আমাকে করার চেয়ে আপনি বরং নিজে খুঁজে বের করুন যে, আপনি এমন একটি প্রশ্নের উত্তর ভিন্নভাবে পেতে পারেন কিনা, কিংবা অন্য কোনো উপায় আছে কিনা এমন প্রশ্নের উত্তর জানার। প্রথম অপশনটি বা ব্যক্তিকে ব্যবহার না করে, নিজেকে আগে ব্যবহার করুন, আর সেক্ষেত্রে আপনার সবচেয়ে ভাল সহযোগি হতে পারে গুগল। তবে গুগলকে ব্যবহার করার আগে নিজেকে বিচার করুন, নিজের দুর্বলতম জায়গাগুলো খুঁজে বের করুন। তারপর সেই দুর্বলতাগুলো দূর করার জন্য এগিয়ে যান বা পদক্ষেপ নিন।
এখন আপনার পাল্টা প্রশ্ন হতে পারে, কিভাবে গুগল ব্যবহার করব। সেখানেও আমার আপত্তি, আপনি আগে শুরু তো করুন। কোনো একটি বিষয় নিয়ে গুগলে খোঁজার চেষ্টা করুন। প্রথম দিকে আশানুরূপ ফলাফল নাও পেতে পারেন, কিন্তু যখন আপনি লাগাতার কাজটি করতে থাকবেন, তখন নিজে নিজেই দক্ষ হয়ে উঠবেন, আর এই নিজে করার প্রয়াসটি নেই বলেই আপনাকে বারবার অন্যের দারস্থ হতে হয়, সব বিষয়েই।
চাকুরীর ক্ষেত্রে ফ্রেশারসদের যে মূল সমস্যা আমি প্রত্যক্ষ করেছি, তারা শিক্ষাজীবনে যেমন জানে কম (কিংবা সেই জানাটা পরীক্ষা পাস করা ভিন্ন অন্য কাজে লাগানোর উপযোগি করে নিজেদের তৈরী করে না), তেমনি শিক্ষাজীবনের বাইরে আরও অনেক কম জানে। শুধু তাই নয়, তারা শেখার জন্য নিজেদের মধ্যে তীব্র আগ্রহ তৈরী করতে ব্যর্থ। যদিওবা আগ্রহ তৈরী করতে সক্ষম হয়, তবে তা কিছু সময়ের জন্য, বছরের পর বছর তা চালু রাখার মতো ধৈর্য্য ও দৃঢ় মানসিকতা তাদের মধ্যে থাকে না। এক্ষেত্রে আমার নিজের একটি অভিজ্ঞতা শেয়ার করি।
অজো পাড়া-গায়ে পড়ালেখা করার দরুণ আমি এডভান্ডস লেভেলে ভাবার মতো কোনো প্রকার পরিবেশের সাথে যেমন সম্পৃক্ত হতে পারি নি, তেমনি বাংলা ছাড়া অন্য কোনো ভাষায় দক্ষ হতে পারি নি। ২০০১ সালে বি.এস.সি পাস করার পর (সেটাও গ্রাম থেকে) যখন প্রথম ইন্ডিয়ান কোম্পানীতে জয়েন করলাম, সেখানে এক ইন্ডিয়ান ইঞ্জিনীয়ার এর সামনে ইংরেজি বলতে গিয়ে এমনভাবে বাক্য গঠন করলাম যে, রীতিমতো হাসির পাত্রে পরিণত হলাম। সেদিন জিদ চেপেছিল যে, যত বছরই লাগুক না কেন ইংরেজি বিষয়টিতে আমি অবশ্যই দক্ষতা অর্জন করব, অন্তত প্রফেশনাল জীবনে যেন আর কখনও আমাকে হাসির পাত্র হতে না হয়। এরপর আজ ১৬টি বছর কেটে গেল, আমি এখনও আমার সেই জিদ ও ইচ্ছার সাথে অবিচল রয়েছি। না, সে জন্য আমি কখনও ইংরেজি শেখার জন্য কোনো কোর্স করিনি, কারও কাছে কোনো প্রকার সহযোগিতা চাইনি, বরং নিজে নিজেই ইংরেজি শেখার জন্য যেসব পদক্ষেপ নিয়েছিলাম, তার মধ্যে ৩টি মেজর কাজ ছিল, ১. নিয়মিত ইংরেজি ভাষার সিনেমা দেখা, ২. যত কঠিনই হোক না কেন, সাবটাইটেলসহ অন্যান্য ভাষার সিনেমা দেখা (এভাবে আমি হাজার হাজার সিনেমা দেখেছি, যা কিনা পরবর্তীতে আমাকে একজন মুভি রিভিওয়ার হিসেবে গড়ে তুলেছে। অর্থাৎ, আপনার যে কোনো প্রয়াসই আপনাকে কোথাও না কোথাও নিয়ে যাবে, যদি আপনি লাগাতারভাবে লেগে থাকেন ও পরিশ্রম করেন), ৩. প্রতিদিন সকাল ও রাতে কম করেও ১ ঘন্টা বিবিসি ব্রডকাস্টিং শোনা। এছাড়াও অন্যান্য যেসব কাজ করেছিলাম বা আজও করি, যে কোনো ইংরেজি লেখা পেলেই পড়া শুরু করা; যত ভুল ভাবেই ইংরেজিতে কথা বলি না কেন (এমনকি He এর ক্ষেত্রে She কিংবা She এর ক্ষেত্রে He ব্যবহার করলেও) ইংরেজিতে কথা বলার চেষ্টা করা। যদি সেটা সম্ভব না হয়, তখন মোবাইল বা কম্পিউটার এ নিজেই নানাবিধ টপিক নিয়ে আবোল-তাবোলভাবে ইংরেজিতে কথা বলি ও রেকর্ড করে পরে শুনি। আমি কাজগুলো লাগাতারভাবে আজও করি এবং এত দীর্ঘ সময় হাল ছাড়ি নি, কারণ আমার মনে হয়েছে আমি এখনও খুবই বাজে ইংরেজিতে।
সুতরাং, আপনার জিদ থাকতে হবে এবং একাগ্রতা নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। খুব দামি কোনো ইন্সটিটিউট এর সার্টিফিকেট পেতে আপনার অর্থের প্রয়োজন হতে পারে, কিন্তু আপনি যদি বর্তমান সময়ে জানতে চান, শিখতে চান, তবে শুধু ইন্টারনেট থাকলেই আপনার আগ্রহের সকল কিছুই জানতে পারবেন। Khan Academy (www.khanacademy.org) কিংবা EDX (www.edx.org) এর মতো অনেক প্রয়াসই এখন বিস্তৃতভাবে চালু হয়েছে এবং সামনের দিনগুলোতে শিক্ষা বিষয়টি অনেকটাই ফ্রি হয়ে যাবে। কিন্তু, হলেও কি তা আপনার কোনো কাজে আসবে, যদি না আপনার শেখার জন্য তীব্র ইচ্ছা থাকে। এই একটিমাত্র বিষয়ই আপনাকে জীবনে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে, নতুবা যেভাবেই আপনাকে উদ্বুদ্ধ করা হোক বা শেখানো হোক না কেন, তা আপনার কোনো কাজে আসবে না।
ধরুণ, কেউ হয়ত আপনাকে বলল যে, আপনার সিভিটি লেখা ঠিক হয়নি। আপনি শুনে হয়ত দমে গেলেন। তখন আপনার জায়গায় আমি হলে বিষয়টি নিয়ে ভাবতাম। গুগল করতাম, গুগলে গিয়ে সার্চ করতাম এভাবে,
Best CV samples for freshers, CV writing tips for freshers, CV samples for fresh BBA graduates, CV samples for CSE graduates—এভাবে নিজের প্রয়োজন অনুসারে একের পর এক টপিক এ সার্চ করতাম এবং লাগাতারভাবে তা করেই যেতাম। পরে সেখান থেকে আমার প্রয়োজন অনুসারে CV Samples কালেক্ট করতাম, সেগুলো স্টাডি করতাম ও জানার চেষ্টা করতাম যে কিভাবে তারা সিভি লিখছে বা লিখতে বলছে এবং আমি কোন ভুলগুলো করেছি। এরপর নেটে বিভিন্ন প্রফেশনালসদের পোস্ট পড়তাম, যেখানে তারা অনেকট টিপস দিয়ে থাকে যে, কিভাবে সিভি লিখতে হয় বা লেখা উচিত। কিন্তু আপনি তা করতে চান না, বরং আপনি নিজের অলসতার দরুণ বা নিজের উপর বিশ্বাসহীনতার কারণে সিভি রাইটারদের শরণাপন্ন হোন। কিন্তু, আপনি এই বাস্তবতাটি ভুলে বসে আছেন, তারা আপনাকে তথ্যগত ধারণা দেবে ঠিকই, কিন্তু শেখার বা জানার কাজটি আপনার নিজেকেই করতে হবে, যেটা আপনি নিজে চাইলেও করতে পারেন।
এরপর ধরুন ইন্টারভিউ টিপস। আপনি কি জানেন, ইউটিউবে লক্ষ লক্ষ শিক্ষনীয় ভিডিও আছে ক্যারিয়ার ও ইন্টারভিউ সম্পর্কিত। শুধু কি তাই, বিভিন্ন পোস্টে স্যাম্পল ইন্টারভিউ কোয়েশ্চেন এর এত লক্ষ লক্ষ পোস্ট আছে নেটে যে, আপনি সারাজীবন পড়েও শেষ করতে পারবেন না। কিন্তু সেগুলো সংগ্রহ করে পড়ার পরিবর্তে আপনি আপনার না জানার সমস্যাটিকে দিনে দিনে প্রকট করে তুলেছেন, অথচ আপনি কখনও কি ভেবে দেখেছেন, যতটা সময় আপনি ফেসবুক, সিনেমা দেখা, গান শোনা, বন্ধুদের সাথে আড্ডা, কিংবা নিতান্তই হোয়াটস অ্যাপ বা ইমো এই জাতীয় অ্যাপ ব্যবহারে নষ্ট করেন, তার ৫০% ও যদি আপনি শেখার বা জানার জন্য ব্যয় করতেন, আপনি এত কিছু জানতে বা শিখতে পারতেন যে, আপনাকে কারও দারস্থ হতে হতো না। যে কোনো বিষয়ে জানুন, প্রয়োজন না হলেও জানুন, তাতে আপনার জানার যে আগ্রহ তা টিকে থাকবে, আপনি এগিয়ে যাবেন এবং কখনও না কখনও তা আপনার কাজে আসবে।
ইন্টারভিউ নিয়ে আমার বেশি কিছু বলার নেই, শুধু বলব, আপনি যেটুক জানেন, সেটুকু আর একটু ভাল করে ঝালাই করে নিন ইন্টারভিউ দিতে যাবার আগে এবং যে পোস্টের জন্য ইন্টারভিউ দিতে যাচ্ছেন, সেই পোস্টটির কি কি জব রেসপন্সিবিলিটি রয়েছে সেগুলো কয়েকবার পড়ে বোঝার চেষ্টা করুন যে, আপনার জানার জায়গাগুলোর সাথে কোথায় কোথায় তা মেলে। যেগুলো মেলে না, সেগুলো নোট করে রাখুন। পরবর্তীতে সেগুলো জানার চেষ্টা করুন আর এক্ষেত্রেও গুগল হতে পারে আপনার সবচেয়ে বিশ্বস্ত সহযোগি। আর যে কোম্পানীতে যাচ্ছেন ইন্টারভিউ দিতে, সে কোম্পানী সম্পর্কে অবশ্যই কিছু জানার চেষ্টা করুন, এটা ইন্টারভিউ এর জন্য অতীব জরুরী না হলেও (কারণ ফ্রেশারসদের এই বিষয়ে খুব বেশি প্রশ্ন করা হয় না বলেই আমার বিশ্বাস, যখন ইন্টারভিউ কর্মকর্তা জানেনই যে প্রার্থী ফ্রেশ), ক্যারিয়ার এ আপনার কাজে আসবে কোনো না কোনো ভাবে। শেষ কথা, দরকার নেই আপনার ইংরেজিতে ইন্টারভিউ দেবার। আপনি যথাযথ বাক্য গঠন করতে জানলে ইংরেজি ছাড়া কেবল বাংলাতেই ইন্টারভিউ দিন। কিন্তু, কোনো অবস্থাতেই বাংলা বলতে বলতে হঠাৎ ইংরেজিতে বলা শুরু করবেন না এবং শুরু করলে মাঝ পথে আটকে গিয়ে আমতা আমতা করবেন না। এই কাজটি আমি অনেক প্রার্থীকেই করতে দেখেছি, এমন কি আমি নিজে বাংলাতে প্রশ্ন করলেও দেখি হঠাৎ ইংরেজিতে উত্তর দেওয়া শুরু করে এবং মাঝপাথে গিয়ে আটকে যায় কিংবা এমন সব বাক্যগঠন করে যে, মুহূর্তকালীন আগের স্বাভাবিক পরিবেশটি নষ্ট করে দিয়ে প্রার্থী নিজের দৈন্যতা প্রকাশ করে, যখন তার কোনো প্রয়োজন-ই ছিল না। তবে যদি আপনাকে ইংরেজি বলতে বলে, তবে অবশ্যই বলবেন, নতুবা সোজা-সাপ্টা পরিস্কার বাংলায় আপনার উত্তর দিন। আমাদের দেশে খুব ভাল বাংলা বলার লোকজন এখন খুবই কম।
আর ছাত্রজীবনে যেসব ইমেইল আইডি ব্যবহার করেছেন, যেমন-jiniasumon, akashjol, neelmegh, rockers, mamun1234, humayun1981, tarekbd, salemanhaider, salesbd, salesmamun (মেইল আইডিগুলো কাল্পনিক, কারও সাথে মিলে গেলে আমি দুঃখিত), এই জাতীয় মেইল আইডিগুলো বাদ দিন CV থেকে। যদি নিতান্তই মনে হয় যে, আপনি এই মেইল আইডিটি কখনোই ছাড়তে পারবেন না, তাহলে আপনাকে জানিয়ে রাখি, আপনি চাইলে কয়েকটি মেইল আইডি ব্যবহার করতে পারবেন একসাথে এবং আপনি চাইলে একটিমাত্র মেইল আইডিতেই সবগুলো আইডি থেকে মেইল রিসিভ করতে পারবেন। এমনকি একটিতে লগইন থেকেই অন্য আইডি থেকে মেইল পাঠাতেও পারবেন।সুতরাং, এমন একটি মেইল আইডি ব্যবহার করুন, যেটা প্রফেশনাল (উপরে বর্ণিত গুলোর মতো নয়) এবং প্রতিটি জব এ্যাপ্লিকেশন আপনার সেই মেইল আইডি থেকে পাঠান। এখন আপনি যদি আমাকে জিজ্ঞেস করেন, কিভাবে সবগুলো আইডির মেইল একটি আইডিতে রিসিভ করব, তাহলে বলব, প্লিজ গুগলকে জিজ্ঞেস করুন (দু’দিন আগে নিউজ দেখলাম, গুগল নাকি এখন সরাসরি বাংলা ভয়েস এও সার্চ সাপোর্ট করে, তাহলে না হয় বাংলাতেই গুগলকে জিজ্ঞেস করুন) এবং এই একটি দিয়েই না হয় আপনার গুগল ব্যবহার শেখা শুরু হোক। তারপরও বলি, জিমেইল এ্যাকাউন্টের সেটিংস এ আপনি অপশনটি পাবেন, বাকিটুকু আপনি নিজে করুন, কেন না নিজে করতে গিয়ে সবসময়ই জানার জায়গাটি বিস্তৃত ও পোক্ত হয়।
অনেকেই দেখি সংখ্যা ও নানা রকম অদ্ভুত শব্দ দিয়ে মেইল আইডি তৈরী করেন, বলেন, নিজের নাম দিয়ে এ্যাকাউন্ট আইডি পান না। তবে একটা ছোট্ট টিপস দিই, যদি কখনও দেখেন আপনার নাম দিয়ে মেইল আইডি পাচ্ছেন না, তখন mail ডট দিয়ে ট্রাই করুন (mail.tarikulislam), আমার বিশ্বাস পেয়ে যাবেন। মনে রাখবেন, একটি প্রফেশনাল মেইল আইডি অবশ্যই আপনার ব্যক্তিগত বিচক্ষণতার দিকটি নির্দেশ করে।
আর CV তে ৩/৪টি মোবাইল নম্বর দেবার দরকার নেই। একটিই যথেষ্ট, খুব বেশি হলে দুইটি। কিন্তু সেই মোবাইল নম্বরটিই দিন, যেটি আপনি নিজে ব্যবহার করেন। দয়া করে, বাবা-মা বা স্বামীর মোবাইল নম্বরটি দেবেন না। আমি অনেকবার এই বিড়ম্বনায় পড়েছি যে, স্বামী বা বাবা সরাসরি আমাকে বলছেন, বলুন কি বলবেন বা জিজ্ঞেস করবেন। কিন্তু তাদের কি করে বোঝাই, আমি ফোন করেছি 'ওভার ফোন ইন্টারভিউ' নেবার জন্য, তাদেরকে কি বলব আর কি জিজ্ঞেস করব?
আরও একটি জরুরী ব্যাপার যেটা আমি শত শত চাকুরীপ্রার্থীকে করতে দেখেছি, কাঙ্খিত বেতনের ঘরে শূন্য (০) লেখা। আপনার কাঙ্খিত বেতন যদি শূন্য হয়, তবে আপনাকে কোম্পানীতে ডেকে চাকুরী দেবার কোনো মানে নেই। সুতরাং, আপনার কাঙ্খিত বেতনের ঘরে সেই বেতনটিই উল্লেখ করুন, যে বেতনে আপনি সারভাইভ করতে পারবেন। তবে খেয়াল রাখবেন, এই কাঙ্খিত বেতন উল্লেখ করতে গিয়ে এই ভুলটি করবেন না (যেটি করতেও দেখেছি অনেক প্রার্থীকে), বর্তমান বেতনের ঘরে কাঙ্খিত বেতন ও কাঙ্খিত বেতনের ঘরে বর্তমান বেতন লিখবেন না। মাঝে মাঝেই এই বিড়ম্বনায় আমাকে পড়তে হয়, দেখি চাকুরীপ্রার্থী তার বর্তমান বেতনের ঘরে ১৫০০০ লিখলেও, কাঙ্খিত বেতনের ঘরে লিখেছেন আরও কম। বিষয়টি সত্যিকার অর্থেই আপনার নেতিবাচক দিকটি প্রবলভাবে তুলে ধরে, ফলে এই বিষয়গুলো অবশ্যই খেয়াল রাখবেন ও জব পোর্টালে আপনার পোস্ট করা সিভিটি অবশ্যই মাঝে মাঝে আপডেট করবেন।
পরিশেষে বলি, আর্থিক কষ্ট বা সুযোগের অপ্রতুলতা আমাদের দেশের যুবসমাজের জন্য বিশাল এক সমস্যা। কিন্তু আপনাকে জানিয়ে রাখি, এই বাস্তবতার ভুক্তভোগি আপনি একা নয়, বরং আমি-আপনি উভয়েই লাগাতার সংগ্রাম করে যাচ্ছি এবং ব্যক্তিগতভাবে আমি জীবনের এই মুহূর্তে এসে এই মহামূল্যবান অভিজ্ঞতাটি অর্জন করেছি যে, যদি কেউ আমাকে নিশ্চিতভাবে বলে যে, আপনার কাছে মাত্র ১ মিনিট সময় আছে জীবনের, তবে আমি সেই ১ মিনিটও আশা ছাড়ব না, বরং সেই ১ মিনিটও জীবনের দিকেই আশা নিয়ে এগিয়ে যাব। অনেকেই হয়ত বলবে, এমনটি মুখে বলা সহজ, কিন্তু বাস্তবে করা কঠিন। আমিও বলব, আলবৎ করা কঠিন আর এই কঠিন কাজটি যারা করতে সমর্থ হয়েছে, তারাই জীবনে এগিয়েছে, সাফল্য অর্জন করেছে। তাছাড়া, জীবন অভিজ্ঞতা তো একদিনের বিষয় নয়, বছরের পর বছরের অর্জন এবং সেটা আপনাকেই অর্জন করতে হবে আর আপনি তা কিভাবে করবেন, সেটা নিজেই নির্ধারণ করুন।
তাই বলব, যত বিরূপই হোক না কেন জীবনের পরিস্থিতি, আশা হারাবেন না, কেন না আপনি মানুষ এবং যতক্ষণ বেঁচে আছেন, টিকে থাকার জন্য সব রকমের চেষ্টাই আপনি করবেন, করতে আপনি বাধ্য, কেন না জীবন চলমান এক প্রক্রিয়া, এটা যতক্ষণ বর্তমান আপনি নিজেও সেই চলমানতার অংশ, আপনাকে আপনি নিজে থামাতে ব্যর্থ, যদি না মৃত্যু এসে আপনাকে থামিয়ে দেয়। তাই বলব, এগিয়ে যেতে, টিকে থাকতে যখন আপনি বাধ্য, তখন আশা ছাড়বেন কেন, আশাটুকু নিয়েই না হয় এগিয়ে যান, টিকে থাকুন।
সবার মঙ্গল হোক। জানার তীব্র আগ্রহ যে কোনো মূল্যে বাঁচিয়ে রাখুন নিজের মধ্যে।
Written by
Tarikul Islam
Manager-HR at AB Group
Post a Comment